শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ, নিহত অন্তত ১০

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কেঁপেছে দেশ, যাতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, ছয়শ ছাড়িয়েছে আহতের সংখ্যা। গত ২০ নভেম্বর ছুটির দিন সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটের এ ভূমিকম্পে মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫ দশমিক ৭; উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে। ২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে আতঙ্ক ছড়ায়, বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন মানুষ। এরপর আসতে থাকে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য। সবশেষ খবর অনুযায়ী, এ ভূমিকম্পে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। আরমানিটোলায় বহুতল ভবনের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- রাফিউল ইসলাম, হাজী আবদুর রহিম ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন। ঢাকায় আরেকজনেরর মৃত্যু হয় মুগদা এলাকায়। সেখানে ভূমিকম্পের সময় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়া রেলিংয়ের আঘাতে মৃত্যু হয় নিরাপত্তাকর্মী মাকসুদের। বাকি ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে; আরেকজন মারা যান নারায়ণগঞ্জে। নরসিংদীতে নিহতরা হলেন—সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল (৪০) ও তার ছেলে হাফেজ মো. ওমর (৮), পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫), কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের জয়নগর ইউনিয়নের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভবনের দেয়াল ধসে মৃত্যু হয় দশ মাসের এক শিশুর। আহত হন শিশুটির মাসহ দুজন। ভূমিকম্পের মধ্যে গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে চার শতাধিক মানুষ আহত হন। গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক আব্দুল সালাম সরকার বলেন, “এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ভূমিকম্পে কম-বেশি আহতরা এ হাসপাতালে এসেছেন।” নরসিংদীতে আহত হয়েছেন শতাধিক। গুরুতর আহ ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের তিনতলা ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের চারতলা থেকে নিচে লাফ দিয়ে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন কেউ কেউ। হতাহতের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু ভবনে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। হেলে গেছে অনেক ভবন। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাতীয় গ্রিডের সাবস্টেশনের যন্ত্রাংশ পুড়ে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভূমিকম্পের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি। কিছু সময়ের জন্য বিঘ্নিত হয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভূখণ্ডে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেরও ইতিহাস রয়েছে। তবে গত কয়েক দশকের মধ্যে এমন প্রাণঘাতি ভূমিকম্প দেশের মানুষ আর দেখেনি। ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে এ ভূমিকম্পটি হয়েছে, ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে। ভূমিকম্পের কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশ। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” এ অঞ্চলে এর চেয়ে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা যে রয়েছে, সেটা স্মরণ করে দিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পন হলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হবে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকা শহরের ৩৫ শতাংশ ভবন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকা এড়ানো হয়ত সম্ভব নয়, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবনের মান পরীক্ষা করা, ঝুঁকির ভিত্তিতে সেগুলোকে আলাদা করা এবং নাগরিকদের সতর্ক করাসহ নিয়মিত মহড়া আয়োজনে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..