অঙ্গীকার পূরণ হয়নি দুর্ঘটনা বেড়েছে

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক দশককে নিরাপদ সড়ক দশক ঘোষণা করেছিল জাতিসংঘ। কারণ একটাই সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। বাংলাদেশও এই কর্মসূচিতে অনুস্বাক্ষর করে। কিন্তু দুর্ঘটনা কিংবা প্রাণহানি কমাতে পারেনি। বরং আরও বেড়েছে। এরপর আবারও জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তবে এর কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত অর্ধেকে নামিয়ে আনতে ২০০৮ সাল থেকে তিন বছর মেয়াদি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে আসছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২০০৮-২০১০, ২০১১-২০১৩, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৭-২০২০ কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কী সফলতা, তা মূল্যায়ন করেনি সরকার। ফলে এসব কর্মপরিকল্পনা কাগজেই রয়ে গেছে। সড়ক নিরাপদ করতে সর্বশেষ কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২০২৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ, বিআরটিএ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। যদিও সরকার সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি নানামুখি কাজ সম্পন্ন করেছে, যার মধ্যে– দূরপাল্লার চালকদের ক্লান্তি দূর করতে মহাসড়কের পাশে কিছু বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। এরপর সওজ কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং মাগুরায় পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য চারটি আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রকল্প নেয়। এখনো সেগুলো চালু হয়নি। এ ছাড়া সারা দেশে ১৭২টি স্থানে (ব্ল্যাক স্পট) সড়কের বাঁক সোজা করা হয়েছে; কিন্তু দুর্ঘটনা কমছে না। নিরাপদ সড়কের জন্য পাঁচ বছর আগে দেশ কাঁপানো আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারের দিক থেকে সড়ক নিরাপদ করতে নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও দেশের সড়ক-মহাসড়ক শেষমেশ নিরাপদ করা যায়নি। দেশে গত ১৪ বছরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত বিপুল উন্নয়ন হলেও সে তুলনায় সড়কে চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। বিশেষ করে ঈদ বা বড় কোনো উৎসবে ছুটির সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা বেড়ে যায় উল্লেখযোগ্যহারে। সম্প্রতি ঈদযাত্রা শেষ হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের জীবনে ঈদযাত্রার ভোগান্তি যেন জন্মথেকেই। সড়কে চাদাবাজি কমে আসলেও দুর্ঘটনা বেড়েছে। মানুষের সাথে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তবে বেশিরভাগ যানবাহনই হচ্ছে নষ্ট ও অবৈধ। এক দৈনিকের সূত্রমতে জানা যায়, সড়কে চলমান যানবাহনেরই মধ্যে ৬ লাখ অবৈধ। যদিও বিপুল অর্থ ব্যয় করে অবকাঠামো উন্নয়ন আর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ। ফলে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমছে না। বড় বড় যানের সঙ্গে দুর্ঘটনার ভাগিদার হচ্ছে মটরসাইকেল। দুই চাকার এই যান যাত্রী পরিবহনে উপযুক্ত না হলেও ঈদযাত্রায় বেশিরভাগ মানুষ যাতায়াত হিসেবে এই যানকেই ব্যবহার করে থাকে। ঈদযাত্রায় দূরপাল্লায় যান হিসাবে মটরসাইকেল চলাচলের কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানুষ এসব অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন র্কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ১ হাজার ৪৬৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৬৭ জন নিহত ও ১ হাজার ৭৭৮ জন আহত হয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর এবার ঈদুল ফিতরের আগের সাত দিন অর্থাৎ ৪ এপ্রিল থেকে গত ১৫ এপ্রিল ১২ দিনে সড়কে ৩৫০টি দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে (কমবেশি হতে পারে)। এ ছাড়া আরও অন্তত ৫৪৪ জন আহত হয়েছে। অর্থাৎ ঈদযাত্রা ঘিরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২১ জন মানুষ নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে আহত হয়েছে আরও বহু মানুষ। বিআরটিএর হিসাবে, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৩০শতাংশ। গত বছরের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭টি এবং এতে ১ হাজার ৫১ জন নিহত ও ১ হাজার ৪৪০ জন আহত হয়। প্রতিবারই ঈদের সময় রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ ঢাকা ছেড়ে বাড়িমুখী হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদযাত্রা ও নববর্ষ একসাথে পড়ায় লম্বা ছুটিতে ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিল। ফলে সড়কে ঈদের আগে-পরে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। এ সময় গণপরিবহনের বড় রকমের সংকট দেখা যায়। আর ঈদের দিন থেকে পরের কয়েক দিন সড়কও থাকে ফাঁকা। এ সুযোগে পাল্লাপাল্লি করে গাড়ি ওভারটেক (পাশ কাটিয়ে আগে যাওয়া) করে চালকরা। ঈদের সময় অনেক ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছুটিতে থাকায় গাড়ির মালিকরা অনেক সময় গাড়ি চালান। এ ছাড়া গণপরিবহন চলাচলে বাড়তি চাপ থাকায় অনেক সময় চালকের সহকারীরা (হেলপার) চালায় গাড়ি। অন্যদিকে যাত্রীর চাপ থাকায় নগরীর গণপরিবহনও উঠে যায় মহাসড়কে। সেই সঙ্গে অনেক মৌসুমি চালকও দূরপাল্লার গাড়ি চালায়। ঈদযাত্রার সুযোগে অনেক ফিটনেসবিহীন বাসও সড়কে দাপিয়ে বেড়ায়। এসব নানা কারণে ঈদে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..