ব্রিটিশ যুগ থেকেই নারীদের ছিল দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ : আজ প্রয়োজন আরও বিকশিত করা

এ. এন. রাশেদা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
১৯২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টি। এর পূর্বেই ১৯১৭ সালে প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে। এরও পূর্বে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতবর্ষে সংগঠিত হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ। সিধু কানু ও কানু মুর এই দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে যারা ব্রিটিশের শক্তিশালী বাহিনীর রাইফেল, কামান-গোলার সামনে লড়েছিল তীর-ধনুক নিয়ে। আর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১৯৩৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত হয়েছে টংক আন্দোলন। উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত হয়েছে তেভাগা আন্দোলন। এই সকল আন্দোলনে হাজং, সাঁওতাল ও বাঙালি কৃষক নারীদের ছিল ব্যাপক অংশগ্রহণ। গ্রামাঞ্চলের কৃষক নারীদের আন্দোলনের সুবাতাস শহরাঞ্চলেও ছিল। গ্রামাঞ্চলে ফসল প্রাপ্তির ন্যায্য অধিকারের পাশাপাশি নিজেদের শিক্ষিত করার এবং নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কাজে ‘১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার পশ্চিম গাঁওয়ে নবাব পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন ফয়জন্নেসা চৌধুরানী। নারীশিক্ষার জন্য যিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন– যা আজও ‘ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়’ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও তাঁর ছিল জনকল্যাণমূলক বহুবিধ কাজ। বেগম রোকেয়ার জন্ম ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে। রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর অবদান সুবিদিত। শত প্রতিকূলতার মাঝে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নাম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল। ১৮৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মনোরমা রায়। পরবর্তীতে মনোরমা বসু। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমী, সমাজসেবক, স্বদেশী আন্দোলন ও সাম্যবাদী আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক। প্রীতলতা জন্মেছিলেন ৫ মে ১৮৯১। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে লড়াই করে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২-এ আত্মহুতি দিয়েছেন সায়ানাইট খেয়ে। তিনি সক্রিয় ছিলেন মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে। ১৯২৪-এর ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন শ্রীমতি হেনা দত্ত। পরবর্তীতে হেনা দাস। তাঁর ভাই বারীণ দত্ত। স্কুল জীবনেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। নানকার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তারপর সিলেটের চা শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা এবং শিক্ষক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ইলা মিত্রের জন্ম ১৮ অক্টোবর ১৯২৫। ১৯৪৬ সালে তিনি জমিদার বাড়ির বৌ হয়ে জমিদারদের বিরুদ্ধে তেভাগা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের চরম অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করেছেন কারান্তরালে– যা সুবিদিত। উল্লেখ্য যে, ভারতবর্ষে ১৯২৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার কাল থেকেই ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বে-আইনি ছিল। কমিউনিস্ট কংগ্রেসের সদস্য হয়ে কাজ করতেন। একইভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের নারী পুরুষ অনেকে মার্কসবাদে দীক্ষা নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে এসেছিলেন। যেমন লতিকা দাস (সেন), কমলা চ্যাটার্জী, মণিকুন্তলা সেন, কল্পনা দত্ত (যোশী), ইন্দুসুধা ঘোষ, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, মনোরমা বসু, শশীপ্রভা দেব প্রমুখ। ’৪০-এর দশকের শুরুতে কমিউনিস্টদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম নারী গণসংগঠন ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কমলা চ্যাটার্জী। কমিউনিস্টদের উদ্যোগে বাংলার নারী-সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় আরও কয়েক বছর পর। নারী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কমিউনিস্টরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে। ত্রিশের দশকেও সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে ছাত্র ফেডারেশনে ব্যাপক ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। তাই ১৯৩৯-এ গড়ে তোলা হয় Girl Students Association (GSA) । ১৯৪০ সালে সারা ভারত ছাত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সংগঠনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। এই সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের নেত্রী কনক দাশগুপ্ত (মুখার্জী)। পূর্ব বাংলার প্রতিটি জেলায় এই সংগঠন শক্তি অর্জন করেছিল। এই সংগঠনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নারী আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার ভিত্তি তৈরি হয়। ছাত্র ফেডারেশন ও গার্ল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই নারী কমরেডদের সংখ্যা যেমন বেড়েছিল তেমনই বেড়েছিল মহিলা আত্মরক্ষা সমিতিও। কমিউনিস্ট নেত্রী কনক দাশগুপ্ত (মুখার্জী) সারা বাংলায় ছাত্রী সংগঠনের নেতৃত্ব দেন এবং বহু জেলা সফর করে ছাত্রী সংগঠন গড়ে তোলায় সহায়তা করন। ১৯৪১-এর ডিসেম্বরে বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে এশিয়ায়। জাপানি বাহিনী ভারত সীমান্তের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং ২০ ডিসেম্বর কোলকাতায় বোমা বর্ষণ করে। তখন নারী কমরেডরা দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় আত্মরক্ষা সমিতি গড়ে তুলেন। ১৯৪৩-এর ৮ মার্চ প্রথম প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং নামকরণ করা হয়–‘নিখিল বঙ্গ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’। সে সময়ে সরকারের গণবিরোধী নীতির কারণে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়– এতে ৩০ লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে– যা তেতাল্লিশের মন্বন্তর বা ১৩৫০ বঙ্গাব্দের জন্য পঞ্চাশের মন্বন্তর নামেও পরিচিতি পায়। নারী কমরেডরা সে সময়ে ইংরেজ ও আমেরিকান সৈন্যদের লোলুপ দৃষ্টির হাত থেকে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত অসহায় মেয়েদের রক্ষা, মেয়েদের যুদ্ধকালীন আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ, বর্বর ফ্যাসিস্টদের কবল থেকে দেশ রক্ষা করা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া জেলবন্দি জাতীয় নেতাদের জন্য আন্দোলন করা এবং খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে শিশু, নারীসহ সবাইকে রক্ষা করার জন্য কাজ করেছিলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন কমলা চ্যাটার্জী, মনিকুন্তলা সেন, যুঁইফুল রায়, লতিকা সেনসহ আরও অনেকে। ছাত্রী নেত্রীদের মধ্যে ছিলেন কনক দাশ গুপ্ত, কল্যাণী মুখার্জী প্রমুখ– যাঁরা পরবর্তীতে যুক্ত হন আত্মরক্ষা সমিতিতে। প্রাদেশিক নেত্রীবৃন্দের মধ্যে ছিলেন পূর্ব বাংলা আত্মরক্ষা সমিতির কমলা চ্যাটার্জী, বরিশালের মণিকুন্তলা সেন, যুঁইফুল রায়, যশোরের কনক মুখার্জী এবং রেণু চক্রবর্তী প্রমুখ। নারী সংগঠন গড়ার ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টি আন্তরিকভাবেই কামনা করেছিল যে, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি কোনো দলের লেজুড় না হয়ে স্বাধীন গণসংগঠন হিসেবে বিকশিত হোক এবং সর্বদলীয় চরিত্র লাভ করুক। এই সংগঠনের অভ্যন্তরে দলমত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতী নারী, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তসহ সর্বস্তরের নারীরা ঐক্যবদ্ধ হবে। ১৯৪০ সালের একটি ঘটনা বর্ণনা করা যাক। ২৬ শে মার্চ ঢাকার নর্থব্রুক হলে মনিকুন্তলা সেনের সভাপতিত্বে যে সভা হয়– এতে ৪০টি কেন্দ্র থেকে ৭০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। আর চট্টগ্রাম সম্মেলনে ২৫০০ মহিলা অংশগ্রহণ করেন। নেত্রীদের মধ্যে ছিলেন কল্পনা দত্ত, জ্যোতি দেবী প্রমুখ। ’৪৩-এর মার্চে পাবনায় ৬০০ মহিলা ভুখা মিছিল করেন। রংপুরে নারী আন্দোলনে কিষাণ মেয়েরাই নেতৃত্ব দেন। ঠাকুরগাঁ-এর গ্রামে গ্রামে মুসলিম ও রাজবংশী (ক্ষত্রীয়) মহিলারা যোগ দেন। ১৯৪৩-৪৪-এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি জেলায় ‘আত্মরক্ষা সমিতি’ গড়ে উঠে। ফরিদপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, দিনাজপুর, রাজশাহীতে আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনায়–সরকারি উদ্যোগের পাশে আত্মরক্ষা সমিতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, ১৯৪৫-এ চট্টগ্রামে দুস্থ শিশুদের জন্য আত্মরক্ষা সমিতি একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছিল। বরিশালসহ অনেক জেলায় আত্মরক্ষা সমিতি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। নারী জাগরণে, নারী আন্দোলনের বিকাশে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির ভিত্তি গ্রামে-গঞ্জে, কলে-কারখানায় শ্রমিক, কৃষক তথা মেহনতি নারীদের মাঝে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছিল। সে সময়ে কৃষক ও শ্রমিক মেয়েদের মধ্যে তীব্র সংগ্রামী চেতনা গড়ে উঠেছিল। চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে মজুরি, রেশনে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ, নারী শ্রমিকদের মাতৃমঙ্গল সুবিধা, শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য সুবিধা এবং তাদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জোরদার হয়েছিল। তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন দিনাজপুরে ছাত্র নেত্রী রাণী মিত্র। কৃষক কমিউনিস্ট মেয়েদের মধ্যে ছিলেন কণ্ঠমণি, দীপেশ্বরী, জয়মণি, রোহিনী, ভান্ডারী, ফুলেশ্বরী, ভুতেশ্বরী, মালো, স্বরাজ নন্দিনী, বরদা সুন্দরী এবং কমরেড রূপনারায়নের তরুণী কন্যা। উল্লেখ্য যে, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে এই কমিউনিস্ট প্রার্থী রূপনারায়ণ, কংগ্রেস প্রার্থী এক জমিদারকে প্রাদেশিক আইন পরিষদে পরাজিত কেরছিলেন। তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় শেরপুরের জ্যোৎস্না নিয়োগীসহ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির কমিউনিস্ট নেত্রীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক-আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কৃষক মেয়েদের আত্মরক্ষা সমিতিতে সংগঠিত করেছিলেন। স্থানীয় অনেক কৃষক মহিলা ছিলেন। তাদের একজন ছিলেন হাজং নারী রাসমনি। তিনি জমিদারী শোষণের বিরুদ্ধে হাজং নারীদের সচেতন করে টংক প্রথা উচ্ছেদের আন্দোলনে সংগঠিত করে গড়ে তুলেছিলেন এক বিশাল নারী-বাহিনী। ব্রিটিশ ফৌজ গ্রামে হানা দিলে রাসমনি সম্মুখ সমরে ফৌজের গুলিতে প্রাণ হারান। এই সংগ্রামে আরও নিহত হন শঙ্খমণি, রেবতী, নীলমণি, পদ্মমণি ও আরও অনেক নাম না জানা বীর নারী। রাসমনির নেতৃত্বে গঠিত নারী বাহিনী মহিলা আত্মরক্ষা সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৪৬-এ নিখিল ভারত কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই নেত্রকোনা শহরে। কারণ ঐ সময়ে কৃষক সমিতি নেত্রকোনায় খুব শক্তিশালী ছিল। সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে কৃষক রমনীরাসহ ময়মনসিংহের সমস্ত নারী নেত্রীরা মনপ্রাণ দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করেছিলেন। ফলস্বরূপ লক্ষাধিক কৃষক কৃষাণীর অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে দিনাজপুরে ঘটেছিল অন্য এক ঘটনা। সেখানে জোতদাররা ১৭ জুন ভাগ চাষীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে পুলিশ পাঠিয়েছিল। পুলিশের ১৩১ রাউন্ড গুলি বর্ষণে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ৩ জন মহিলাসহ ২২ জন নিহত হয়েছিলেন। মহিলারা ছিলেন কৌশল্যা, কামরানী ও যশোদা বারসানী। নড়াইলে তেভাগা আন্দোলনে সরলান্দি নামে সুপরিচিত নমশুদ্র রমনী– যিনি তিনশ মেয়েকে নিয়ে ঝাঁটাবাহিনী গঠন করেছিলেন। এভাবে সিলেটে নানকার প্রথা উচ্ছদে নানকার মেয়েরা আত্মরক্ষা সমিতির সহায়তায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন– নানকার রমনী কালই বিবির নেতৃত্বে। একইভাবে রাজশাহীর নাচোলে ‘রাণী মা’ ইলা মিত্রের নেতৃত্বে, বরিশালে দুই নেত্রী– মণিকুন্তলা সেন ও যুঁইফুল রায়ের নেতৃত্বে এবং মনোরমা বসুর সহায়তায় তাঁরা বরিশালেই অনুষ্ঠিত করেন মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির দ্বিতীয় নিখিলবঙ্গ সম্মেলন। পূর্ব বঙ্গের আরও কিছু নারী নেত্রীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। তারা হলেন ময়মনসিংহ জেলার জ্যোৎস্না নিয়োগী, অনিমা সিংহ, শান্তি দত্ত, নিবেদিতা নাগ, আরতি দত্ত (চট্টগ্রাম), সেলিনা বানু (পাবনা), নাদেরা বেগম (ঢাকা) প্রমুখ। ১৯৫২ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যারা সমর্থন দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাদের মধ্যে স্মরণ করতে হয়– মিছিলে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে ড. হালিমা খাতুন, ড. সুফিয়া খাতুন, রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া ইব্রাহীম প্রমুখ। পরবর্তীতে যারা নিন্দা জানিয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা হলেন–কবি বেগম সুফিয়া কামাল, মিসেস কাজী মোতাহার হোসেন, নূরজাহান মোর্শেদ, কবি লায়লা সামাদ, কামরুন নাহার লাইলী প্রমুখ। ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন থেকে এবং পরবর্তীতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন– তৎকালীন অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত মতিয়া চৌধুরী, মাহফুজা খানম, মালেকা বেগম, আয়শা খানম, মুনিরা আক্তার, কাজী মমতা হেনা, তরু আহমেদ, রোকেয়া খানম, ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, ডা. কাজী তামান্না, ডা. মখদুমা নার্গিস প্রমুখ। ১৯৬৯ সালে নতুন নারী কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কমরেড মো. ফরহাদ প্রথম আলোচনা করেছিলেন ছাত্রী নেত্রী মালেকা বেগম, ফৌজিয়া মোসলেম, মখদুমা নার্গিস রতনার সঙ্গে। পরবর্তীতে মনিরা আক্তার, কাজী মমতা হেনা, ফরিদা আক্তার প্রমুখের সঙ্গে। আয়শা খানম তখন ছাত্র নেতৃত্বে। পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল গণসংগঠন হওয়া উচিত দলীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের। আজ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এবং গণসংগঠন হিসেবে মহিলা পরিষদের ৫৬ বছরে আমরা কী দেখছি– তা এই স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভবপর না। হতে পারে অন্য কোনো সময়ে অন্য কোনো পরিসরে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় কমিউনিস্টদের শ্রম ছিনতাই হয়ে গেছে। আবার জেগে উঠতে হবে বিপুল বিক্রমে। লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সিপিবি

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..