ইলা-রমেন কথা
Posted: 19 অক্টোবর, 2025
এ রচনা মূলত ইলা মিত্র, রমেন মিত্রের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে তাঁদের নিয়ে স্মৃতিচারণা। সেই সূত্রে নাচোল-ঘটনার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কথকতা এবং প্রাসঙ্গিক রাজনীতি কথা। যে রাজনৈতিক কথাও তাঁদের সঙ্গে আমার ছয় মাসের সম্পর্কভিত্তিক ও ছয় মাসের ঘটনাবলিতে সীমাবদ্ধ। সেসব ঘটনা, ইতিবৃত্ত যদিও তখন লেখা ব্যক্তিগত ডায়েরিভিত্তিক, তবু এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সে সময়কার রাজনীতি সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বয়ান। আমি তখন বাম রাজনীতিতে গভীরভাবে মগ্ন, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা এক তরুণ ছাত্র, শিক্ষাজীবন ও পড়াশোনা যার কাছে তখন বাহুল্যমাত্র। অথচ বিশ্বসাহিত্য ও মার্ক্সবাদী রচনাপাঠে প্রবল আগ্রহ।
এমন এক পরিস্থিতি ও পরিবেশে ইলা মিত্র ও রমেন মিত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। প্রথমজন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, দ্বিতীয়জন আত্মগোপনে, মাথার ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। রাজশাহী থেকে চলে এসেছেন ঢাকায়, গোপনে ইলা মিত্রের মামলা পরিচালনার সুবাদে এবং হাসপাতালে ইলা মিত্রের দেখা সাক্ষাতের প্রয়োজনে।
দ্বিতীয় প্রয়োজনের দায় যথাযথ সম্পন্ন করতে জেলা পার্টির নেতৃত্ব আমার সর্বাঙ্গীন সাহায্য চেয়েছে। সে সাহচর্য প্রধানত রাজনৈতিক, যা নিত্যদিনের ঘটনায় ব্যক্তিক সম্পর্কে পৌঁছে যায়।
পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিককার কথা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ২০ নম্বর ব্যারাকের ৬ নম্বর রুমে বসে আছেন আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট নেতা (রাজশাহীর নাচোল এলাকার কৃষকনেতা) রমেন মিত্র। বেশ কিছুদিন থেকে এ রুমে তার যাতায়াত। উদ্দেশ্য একটাই- মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী ইলা মিত্রের সঙ্গে রাতে একবার দেখা করা। এ দেখা করার পাট চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।
আসছেন রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে। কারণ, তাঁর নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। ধরা পড়লে সমূহ বিপদ। তবু আসছেন। এবং তা পার্টির মতামত সাপেক্ষে। পার্টি নেতৃত্বের ভাবনা, তাঁদের দেখা সাক্ষাৎ ইলা মিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। তাই কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা। সময়টা ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি।... জনৈক পার্টি নেতার অনুরোধে ইলা মিত্রের দায়টা আমার কাঁধেই থাকে।... সমস্যা ছিল ইলা মিত্রকে নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার অন্তর্ভুক্ত, ফ্যাসিস্ট লীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত, সারাক্ষণ শয্যার পাশে পুলিশ পাহারা, হাসপাতাল জুড়ে আলোচনা। প্রফেসর কে এম আলমের অধীনে তাঁর চিকিৎসা ভালোভাবেই চলছে।
...হাসপাতালের বেডে শুয়ে ইলা দি। তাঁর স্বাস্থ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।... কিছুটা চিন্তিত তাঁর চিকিৎসকেরাও। বিশেষ করে সার্জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কে এম আলম। তিনি সময়-অসময়ে রুটিন পর্যবেক্ষণের বাইরেও মাঝেমধ্যে এসে ইলা দিকে দেখে যান। কুশল সংবাদ দেন।
....এর মধ্যে মওলানা ভাসানী ইলাদিকে দেখতে হাসপাতালে এলেন। ওয়ার্ডে ঢুকেই ‘কোথায় ডাক্তার, কোথায় নার্স’ ইত্যাদি হাঁকডাকে সবাইকে তটস্থ করে তোলেন। খবর শুনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এলেন। আলম স্যারকে মওলানার কথা: ‘ডাক্তার, আমার মেয়ের চিকিৎসায় যেন গাফলতি না হয়।’ আলম স্যার তাঁকে আশ্বস্ত করেন।
সার্জন কে এম আলম ছিলেন অন্যদের থেকে কিছুটা আলাদা। গম্ভীর রাশভারী, মেজাজি, স্বল্পভাষী, রাজনৈতিক চিন্তায় প্রগতিশীল। জানতাম, গোপনে কমিউনিস্ট পার্টিকে অর্থ সাহায্য করে থাকেন তিনি। স্বভাবতই ইলা মিত্রের চিকিৎসা সম্পর্কে তাঁর বিশেষ নজর থাকারই কথা এবং তা ছিলও।
ভাসানীর ঘোষণার পর ইলা মিত্রের দেখাশোনা, যত্নআত্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। তার চেয়েও বড় সুবিধা হলো পাহারাদার পুলিশটি তার রোগীকে সারাক্ষণ নজরে রাখা আর দরকার মনে করেনি। এখানে সেখানে আড্ডা দিয়ে চা-সিগারেট খেয়ে সে এবং বদলি পাহারাদার দিব্যি আরামে সময় কাটিয়েছে। তাই হাসপাতালে রমেন মিত্রকে নিয়ে যেতে মোটেই অসুবিধা হয়নি। অবশ্য স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সময় ছিল রাত আটটার পর, ডাক্তারদের রোগী দেখা শেষ হলে তবেই তাঁকে নিয়ে গিয়েছি।
প্রথম দিন ইলা মিত্র কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে খুব মৃদুকণ্ঠে বললেন, ‘আপনার জন্য কদিন ধরে অপেক্ষা করছি।’ আবার তেমনি নিস্তেজ গলায় জানালেন, ‘আপনাকে কানুর মতো লাগছে।’ অবাক হয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকাতেই বললেন, ‘কানু, ওই যে আমার ছোট ভাই।’ এবার বোঝা গেল। আশ্বাস দিয়ে বলি, ‘কিচ্ছু ভাববেন না। এখানে সবাই আপনার শুভাকাক্সক্ষী, ঠিক ভালো হয়ে যাবেন।’
সে রাতে ঘরে ফিরে সদ্য কেনা খাতার পাতায় ক্লাসনোটের বদলে দিনপঞ্জি লেখা শুরু করি। জীর্ণ খাতার লেখাগুলো কিছুটা ঝাপসা হলেও এখনো পড়তে পারা যায়।
প্রথম সাক্ষাতের দিনটা ছিল ৩ অগ্রহায়ণ, ১১ নভেম্বর ১৯৫৩ সাল। ওই দিনপঞ্জি থেকে কিছুটা তুলে দেওয়া যেতে পারে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে।... ছয় দশক পর এ লেখা পড়তে পাঠকের মজা লাগবে ধরে নিয়ে কিছুটা হুবহু তুলে দিচ্ছি: ‘কিছুদিন হলো পাখিদি এসেছেন এখানে। এর আগে দেখিনি তাঁকে। এ যে দেখছি দিব্যি তরুণী। সাধারণ্যে প্রচুর সহানুভূতি পাচ্ছেন। শুনলাম ওর জীবনের কথা। বীরাঙ্গনা, সন্দেহ নেই এতটুকু। গভীর দীঘল চোখ। বরিন্দের রোদে জ্বলা বাদামি চামড়া, তবু আশ্চর্য রকম সুশ্রী।’
বলার অপেক্ষা রাখে না যে ‘পাখি’ ছদ্মনাম ইলা দির, ‘রঞ্জন’ রমজান ভাইয়ের নাম।
এক সন্ধ্যায় রমেন মিত্র এলেন, পরিচয় ‘রমজান ভাই’। আমিও নিয়মমাফিক আসল নাম জানতে চাইনি, যদিও পরিচয় অজানা ছিল না। বললেন, ওই টেকনামেই যেন তাঁকে ডাকি। সেই থেকে ‘রমজান ভাই’ নামটাই আমার মাথায় গেঁথে আছে, পরবর্তী কয়েক মাসের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের কারণে। এখন ‘রমেন দা’ শব্দটা কেমন যেন অচেনা ঠেকে। রমজান ভাইয়ের মনে আছে কি না, জানি না, ইলা মিত্রের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের রাতে তাঁর হাতে ছিল রজনীগন্ধার ডাঁটা। তাঁকে ইলাদির শয্যার পাশে পৌঁছে দিয়ে করিডরে গিয়ে দাঁড়াই। প্রথম সাক্ষাৎ বলে কথা। কিন্তু ইলাদির জবরদস্তিতে সাক্ষাতের গোটা সময়টা পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছি, অবশ্য অস্বস্তি নিয়ে এবং একটু দূরত্ব রেখে। তবু বরাবর চোখে পড়েছে, মানুষটা কাছে আসতেই ইলাদির ফ্যাকাশে মুখে লালচে ছোপ।
তাঁদের প্রথম সাক্ষাতের কথা আমার ডায়েরিতে: ‘আজ রঞ্জন এল, হাতে রজনীগন্ধার শ্যামল ডাঁটা। একদিন পাখিদির দেহকান্তি ও মনের সৌন্দর্য জয় করেছিল কাব্যরসিক, তীক্ষ্ণনাসা, কোনো এক দীঘল দেহ যুবকের মন। আজ আমার মনে হচ্ছে শুধু একটি কথা: “কাব্য নয়, চিত্র নয়, প্রতিমূর্তি নয়। ধরণী চাহিছে শুধু হৃদয়, হৃদয়।” পাখিদি যেদিন, অর্থাৎ প্রথম দিন লজ্জা আর কুণ্ঠা মিশিয়ে অস্ফুট কণ্ঠে রঞ্জনের সংবাদ জানতে চাইলেন, তাঁর নতমুখী চেহারাটা ভারি সুন্দর দেখাচ্ছিল, ছবি তুলে রাখতে পারলে ভালো হতো। আমার তো আবার ক্যামেরা নেই।’
এরপর নিয়মিত এসেছেন রমজান ভাই। ঘরে ঢুকেই একটা সিজার সিগারেট ধরিয়ে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ টানা, তারপর প্রায়ই গুনগুন করে কবিতা আবৃত্তি। হয় ‘প্রথমা’র কবি প্রেমেন মিত্রের: ‘আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরের, মুটে মজুরের’, না হয় সুভাষ মুখার্জির: ‘এ দেশ আমার গর্ব/ এ মাটি আমার কাছে সোনা’, অথবা সুকান্তের ‘চলে যাবো তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ...।’ আর রবীন্দ্রনাথ হলে শুরুতে: ‘রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম’, পরে ‘মহুয়া’ বা শেষের কবিতা থেকে।
তাঁকে দেখে দেখে বারবার মনে হয়েছে, এমন একজন রোমান্টিক, কাব্যরসিক ইন্টেলেকচুয়ালের পক্ষে কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক আন্দোলনের নেতা হওয়া কীভাবে সম্ভব! তা-ও আবার বিপজ্জনক তেভাগা আন্দোলনের? একমাত্র রোমান্টিক অ্যাডভেঞ্চারের টানেই বুঝি তা সম্ভব।
আর একই কারণে মাথার ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে আসা তাঁর পক্ষে মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। এ-ও একধরনের অ্যাডভেঞ্চারিজম। আর সে অ্যাডভেঞ্চারের নায়ক রমেন মিত্র। পরে একদিন কথাগুলো বলতেই আঙুলের ফাঁকে সিগারেট চেপে রমজান ভাই সশব্দ হাসিতে বলে ওঠেন, ‘ওই, কী ফাজিল ছেলে রে বাবা।’
‘তুই তো দেখিসনি বেথুনের ছাত্রী ইলা সেনকে। কী দুর্দান্ত স্মার্ট, খেলাধুলায় এক্সপার্ট এক অ্যাথলেট, সবার চোখে আকর্ষণীয় এক তরুণী। তার কি না বিয়ে হলো ঢ্যাঙা হাবুল মিত্তিরের সঙ্গে।’ তক্তপোষে জুতসই হয়ে বসে ডান হাতের দুই আঙুলে ধরা ‘সিজার’ সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে, চোখে-মুখে একচিলতে হাসি নিয়ে সরস ভঙ্গিতে মজা করে কথাগুলো বলেছিলেন রমেন মিত্র, যিনি টেকনামে ‘রমজান ভাই’। ছদ্মনাম আত্মগোপনে থাকা কমিউনিস্ট নেতাদের পরিচয় গোপন রাখার এ এক বরাবরের পদ্ধতি।
...মাঘের ১০ তারিখ। ইলাদি সম্পর্কে ডায়েরিতে লেখা, ‘খাঁচায় আটকে থেকে পাখি শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।’ মনে হয় মানসিক উদ্বেগ-অশান্তির কারণে ইলাদির স্বাস্থ্য আশানুরূপ ভালো হচ্ছে না। অথচ ডাক্তার-নার্সদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর মহলের সিদ্ধান্তক্রমে ইলা-রমেনের একমাত্র সন্তান মোহনকে ঢাকায় আনা হয়েছে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে, বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। কাজটা ছিল খুবই ঝুঁকির। তবু পরিবেশ অনুকূল বলেই বোধ হয় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক সন্ধ্যায় ছোট্ট মোহনকে আমার ঘরে নিয়ে আসা হলো। যত দূর মনে পড়ে, তার মামা বা অনুরূপ কেউ সঙ্গে ছিলেন। হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ওই ১০ তারিখের ডায়েরিতে এ সম্পর্কে মাত্র কয়েকটা বাক্য, ‘মোহন এসেছিল। সুন্দর ফুটফুটে বালক। চোখে-মুখে কথা। কী চঞ্চল আর কী দুষ্টু! মনে হয় ও সব জানে, সব বোঝে। মায়ের বুক ফেটে যেতে চায় ছেলেকে সারাক্ষণ কাছে না পেয়ে।’
সত্যি মোহনকে দেখে ইলাদি কিছুটা অভিভূত হয়ে পড়েন। তবে একটু পরই নিজেকে সামলে নেন। ছেলে, স্বামী, পারিবারিক ভাবনা নিয়ে বিচলিত হয়েছিলেন বলেই কি না জানি না, দিন কয়েক পর (১৫ মাঘ) হঠাৎই আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, এত ঘটনার পর মানুষ কি আমাকে আগের মতো করে দেখতে পারবে?’ কথা শুনে অবাক হই। মানুষ মানে তো সমাজ। এমন পোড় খাওয়া, কঠিন ধাতুতে গড়া কৃষকনেত্রীর পক্ষে সমাজ নিয়ে এমন ভাবনা কীভাবে সম্ভব? আমার মতো করে যুক্তি দিয়ে তাঁর দুর্ভাবনা উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি। ইলাদি নিঃশব্দে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সে রাতেই ডায়েরিতে লিখি, ‘কত দুর্বল যে মেয়েদের মন! নইলে অমন দৃঢ়চেতা মেয়েও বিশেষ এক জায়গায় অদ্ভূত রকম স্পর্শকাতর হন কেমন করে? সমাজটা এখনো এমনই যে সংস্কারের ছাপ চেতনা থেকে মুছে ফেলার পরও কিছুটা বুঝি থেকেই যায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কত যুগ লাগবে কে জানে।’
পাঁচ দশক আগেকার লেখা উদ্ধার করতে গিয়ে মনে হলো, এদিক থেকে তখনকার রমজান ভাই তো সংস্কারমুক্তই ছিলেন। এখনো তা-ই। তবে এঁরা সমাজের ব্যতিক্রম। সমাজটা সংস্কারের প্রশ্নে তখনো অনেক পিছিয়ে। তেমনি এখনো।
...যা-ই হোক, সব দেখেশুনে রমজান ভাই মহাখুশি। খুশি বিশেষ করে ভাসানী সাহেবের বিবৃতিতে। ভাসানী বলেছেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে অসুস্থ ইলা মিত্রকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া না হলে তিনি প্রদেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবেন।’ ইলা মিত্রকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা হচ্ছে, কিন্তু তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির জন্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের কয়েকজন সদস্য দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রচার করেছেন। খুশি হওয়ার মতোই খবর।
...রাজনৈতিক অঙ্গনের অবস্থা অনুমান করেই কি না জানি না, মওলানা ভাসানী ইলা মিত্রের মুক্তি এবং সুচিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাঁকে কলকাতা পাঠানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন।
রমজান ভাই নিয়মিত হোস্টেলে আসছেন। তাঁকে আগের মতো সময় দিতে পারছি না- ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঝামেলার জন্য। কবির ও মাহমুদকে বলেছি ইলাদির দেখাশোনা করতে।... ইলাদিকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারিনি। প্রফেসর কে এম আলমের তত্ত্বাবধানে ইলা মিত্র কলকাতায় চলে গেছেন।...এতদিন একান্ত দেখাশোনার পর ঢাকা ত্যাগের আগে ইলাদির সঙ্গে দেখা হলো না, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ডায়েরিতে মন্তব্য, ‘ব্যক্তিগত কাজের ঝামেলায় পাখিদির সঙ্গে দেখা হলো না। ওঁরা উড়ে চলে গেছেন সকাল সাতটায়। খুউব খারাপ লাগছে।’
... ভাগ্যিস ইলাদি শেষ মুহূর্তে সীমান্ত পার হতে পেরেছিলেন। তা না হলে মহাবিপদ ঘিরে ধরত তাঁকে। কারণ, কয়েক দিন পরই ৯২-ক ধারা জারি ও যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে হিংস্র দমননীতি ও ব্যাপক গ্রেপ্তার শুরু করে, তার পরিণাম তাঁদের জন্যও মারাত্মক হতো সন্দেহ নেই।