কমরেড জুনো : সংস্কৃতি ও সংহতি আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র
Posted: 22 নভেম্বর, 2020
জুনো ভাই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমরা আর কোনদিনই তাঁর সঙ্গে আন্তরিক করমর্দন করতে পারবো না। তুমুল আড্ডা আর তুখোড় বিতর্ক আর হবে না তাঁর সঙ্গে। আমি লিখছি, কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনোর কথা। যাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব বহুদিনের। জুনো ভাই ছিলেন, একজন সত্যিকারের মানবিক মানুষ। সমাজ বিপ্লবের একনিষ্ঠ যোদ্ধা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সে বিপ্লবের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন নি। তাঁর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো। সেসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই তিনি ছিলেন অন্যদের থেকে খানিকটা আলাদা। ব্যতিক্রমী ধরনের। জুনো ভাইকে নিয়ে এত তাড়াতাড়ি স্মৃতিকথা লিখতে হবে ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাঁর আত্মজা পুতুল আমাকে যখন জানালো, স্কয়ার হাসপাতালে জুনো ভাইয়ের চিকিৎসায় তাঁর পরিবার সন্তুষ্ট নয়, তখনও মনে হচ্ছিল জুনো ভাই দ্রুতই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসবেন। বরং দুশ্চিন্তা ছিলো তাঁর সহোদর হায়দার আকবর খান রনোকে নিয়ে। রনো ভাইয়ের চিকিৎসার সময়ে তাঁর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো। নিজের শরীরের অসুবিধার কথা তিনি বলতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করতেন না। বরং অন্যদের সমস্যা সমাধান নিয়েই তিনি বেশি ভাবতেন।
কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনো। যার জন্মই সম্ভবত হয়েছিলো বামপন্থি রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্যে। সুবিধাবাদ এবং লুম্পেন চরিত্র যখন আজকের বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীল রাজনীতিকে চরমভাবে সংক্রমিত করেছে তখন কমরেড জুনোর মতো মানুষেরা ছিলেন সততার দ্বীপশিখা। তরুণদের জন্য শিক্ষার কেন্দ্র। যারা তাঁর সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাজ করেছেন। তারা সেটি বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
জুনো ভাইকে কাছ থেকে দেখা ও তাঁর সান্নিধ্য আমার জন্য এক পরম পাওয়া। বিশেষ করে, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের কালপর্বে। ঔপন্যাসিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গের কালে’। তখন জুনো ভাইয়ের সাথে অনেক কথা হতো। বিতর্ক হতো। সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের বাসায়। ফয়েজ ভাই ছিলেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক বিরাট মহীরুহ। বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মীদের বিরাট আশ্রয়। ফয়েজ ভাই এবং জুনো ভাই দুজনেই বাম আন্দোলনের চীনা ধারার উত্তরসূরি। তবে বহু চীনাপন্থিদের থেকে স্বভাবে এবং বিচারবুদ্ধিতে আলাদা। বাম সংকীর্ণতা কিংবা মধ্যবিত্তসুলভ সুবিধাবাদ এঁদের দুজনের কারো মধ্যেই আমি দেখিনি। ফলে ফয়েজ ভাইয়ের মতো জুনো ভাইও হয়ে উঠেছিলেন সকল বামদের একজন প্রিয় নেতা। নির্ভরযোগ্য এবং নির্দলীয় কমরেড। ফয়েজ ভাই যেমনই সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সব সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একতাবদ্ধ করে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের’ অগ্রযাত্রার জন্ম দিয়েছিলেন তেমনই জুনো ভাইও সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালালদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিলেন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গণছায়া, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ এরকম নানা প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। আথিতেয়তার ক্ষেত্রে অনেক নামকরা কমিউনিস্ট নেতার মতো তিনি কৃপণ বা রক্ষণশীল ছিলেন না। জুনো ভাইয়ের বাড়ির দরজা ছিলো সকলের জন্য উন্মুক্ত। আপ্যায়নে একই রকম অবারিত ছিলেন তাঁর সুযোগ্য স্ত্রী। স্বভাবে ধীর-স্থির আমাদের চপল ভাবি। ভাবি ছিলেন জুনো ভাইয়ের প্রতিটি সৃষ্টিশীল কাজ এবং আন্দোলনের অকুণ্ঠ সমর্থনদাতা। দুজনের ভালবাসা এবং সম্পর্ক ছিলো বেশ অনুকরণীয়। বিশ্ব রাজনীতি, সাহিত্য, সিনেমা কিংবা অন্যকোনো আলোচনায় ভাবিও সমানতালে যোগ দিতেন। সেইসঙ্গে থাকতো বাহারি চা-নাস্তা। অনেক সময় সেই প্রাণবন্ত আলোচনা চলতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। বামপন্থি পরিবারগুলোর এসব আড্ডাকে আমার কাছে রাজনীতির বিকল্প শিক্ষায়তন বলেই মনে হয়। যে শিক্ষায়তন আজ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। নতুবা পরনিন্দা এবং সংকীর্ণতার ক্লাবের রূপ নিয়েছে। বাম আন্দোলনের বিকাশের জন্য এই সংকীর্ণতা এবং ব্র্যাকেটবদ্ধ দল গড়ার চর্চা বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।
দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জুনো ভাইয়ের সঙ্গে আমার সাংগঠনিকভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। সে অভিজ্ঞতা থেকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সংগঠন পরিচালনায় নেতা হিসেবে জুনো ভাইয়ের মতো গণতান্ত্রিক এবং উদার প্রকৃতির মানুষ বিরল। অনেক জটিল বিতর্ক ও মতপার্থক্য তিনি সুন্দরভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারতেন। উগ্রবাদীদের মতো জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা তাঁর মধ্যে ছিলো না। আমার মতে, সেটি সম্ভব হয়েছিলো কোনো ব্যক্তির প্রতি তাঁর পক্ষপাতহীনতা এবং তাঁর নির্ভেজাল সততা। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নানা জোট এবং ফোরামে আমরা জুনো ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। কিউবা, ভেনেজুয়েলা সংহতি থেকে শুরু করে প্যালেস্টাইন; ল্যাটিন জনগণের মুক্তির সংগ্রাম থেকে শুরু করে আফ্রিকার কালো মানুষের সংগ্রাম; আরব বসন্তের প্রসঙ্গ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই–সব মিছিলেই জুনো ভাই হেঁটেছেন দৃঢ়তার সাথে। এসব মিছিলে তিনি একা হাঁটেন নি। শামিল করেছেন বহু তরুণ-তরুণীকেও।
জুনো ভাইয়ের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর, কলকাতায়। মৃত্যু ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর করোনাকালে ঢাকায়। তার পৈতৃক বাড়ি নড়াইল জেলার বরাশুলা গ্রামে। বাবা হাতেম আলী খান ছিলেন একজন প্রকৌশলী। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী তাদের নানা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় এমএসসি পাস করেন। তবে স্কুলজীবন থেকেই তিনি বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন তিনি। তখন তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ৬০-এর দশকে বামপন্থি রাজনীতি বিভাজনের কবলে পতিত হলে তিনি ১৯৭০ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন নামক একটি অংশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পান। জুনো ভাই ছিলেন বাম রাজনীতির তৎকালীন চীনপন্থি শিবিরের লোক।
স্বাধীনতার পর তিনি লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে কাজী জাফর আহমেদ-রাশেদ খান মেনন এর নেতৃত্বে তিনি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপির) সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হন। ১৯৭৯ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হলে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। ৮০-এর দশকের শেষ দিকে এসে বাম রাজনীতির মধ্যে সুবিধাবাদ, ব্যক্তিপূজা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তাঁকে চরমভাবে হতাশ করে। ফলশ্রুতিতে তিনি দলীয় রাজনীতি থেকে নীরবে সরে দাঁড়ান। তবে বাম রাজনীতির আনুষ্ঠানিক পদ ছাড়লেও সমাজতন্ত্রের আদর্শ ছাড়েন নি। আমৃত্যু তিনি সমাজতন্ত্রের আদর্শকেই মনেপ্রাণে লালন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন সকল ধরনের কূপমণ্ডুকতার বিরোধী। ফলে মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তাঁর অবস্থান ছিলো চীনাপন্থি, বামধারার বিরোধী। পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষে তৎকালীন চীনা সরকার এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থন তিনি কোনভাবেই মেনে নেননি। বাম রাজনীতির চীনাপন্থার এই ভ্রান্তি তাঁর জন্য বিরাট কষ্টের বিষয় ছিলো। তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে এক ব্যতিক্রম। ফলে, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর এ নিয়ে বেদনাবোধ ছিলো।
তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র জুনো তখন বোমা তৈরির কাজ করছিলেন। এক সময়ের চীনাপন্থি বাম নেতা, পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূইয়াদের সঙ্গে তিনি নরসিংদীর শিবপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এই মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নেই সিপিবির রাজনীতির প্রতি জুনো ভাইয়ের বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ ছিলো। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অবদানকে তিনি যথেষ্ট মূল্য দিতেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে চীনাপন্থিদের বহুধা বিভক্তি এবং অপরদিকে সিপিবির ঐক্যবোধের প্রসঙ্গ তিনি প্রায়শই আলোচনায় নিয়ে আসতেন। চীনা ধারারই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ যখন জীবন সায়াহ্নে এসে সিপিবিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্যপদ নিলেন তখন জুনো ভাই তাতে বেশ খুশিও হয়েছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের লোকেরা বা অন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধের একক কৃতিত্ব নিতে চাইলে তিনি তার বিরোধিতা করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে এক বিরাট জনযুদ্ধ বলে মানতেন এবং সেই মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্টদের অবদানকে যুক্ত করতে চাইতেন। মুক্তিযুদ্ধ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ওপর তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘আগুনঝরা সেই দিনগুলো’ এবং ‘একাত্তরের রণাঙ্গন : শিবপুর’-এ মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
জুনো ভাই ছিলেন রাজনীতির মানুষ। কিন্তু রাজনীতির কলুষ তাঁকে সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে থাকতে দেয়নি। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী। অসাধারণ এক বিনয়ী মানুষ। তাই দলীয় রাজনীতির জটিল বিতর্ক থেকে নিজেকে এক পর্যায়ে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক জগতকে। তাই প্রগতিশীল গণমুখী সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি বিশেষ ভূমিকাও রেখেছেন। গণ-সংস্কৃতি ফ্রন্টের সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ-কিউবা মৈত্রী সমিতির যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিউবা সমিতির প্রতিটি কাজে তিনি নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন। একবার অসুস্থ অবস্থায় ডায়ালাইসিস শেষ করেই আমার বাসায় ছুটে এসেছিলেন কিউবা সমিতির এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দাওয়াতপত্র নিয়ে। সম্মেলনটি ছিল ফিলিপাইনে। আমি তার কয়েকদিন আগেই বিদেশ সফর করে এসেছি। জুনো ভাই আমাকে বললেন, আপনাকে এ সম্মেলনে যেতে হবে। আমার সাথে তাঁর সম্পর্কটা এতোটাই ঘনিষ্ঠ ছিলো যে, তাঁর মতো বিনয়ী মানুষও আমাকে নির্দেশের মতো করে অনুরোধটি করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, অন্য কাউকে যেতে বলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ। তাই যেতে পারছি না। অনেককে বলেছি, কেউ রাজি হয় নি। আপনি না গেলে এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বই থাকবে না। যা আমাদের জন্য খুবই অসম্মানের হবে।’ সেবার বিরাট আর্থিক চাপ মাথায় নিয়ে জুনো ভাইয়ের অনুরোধে আমি সে সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। কমিটির সহ-সভাপতি হারুন ভাই আগেই শর্ত দিয়েছিলেন যে, আমি গেলে তিনি যাবেন। তিনিসহ আমরা মোট দুজন ছিলাম সে সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। সম্মেলন থেকে আমাদের ফিরে আসার পর জুনো ভাই সম্মেলনের প্রতিটি দলিল, প্রস্তাব, ঘোষণা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। তারপর সেগুলো কমিটির সভায় সকলকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেছেন। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সবিস্তারে ব্যাখা করেছেন ল্যাটিন আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদের নানা চক্রান্ত এবং তার বিরুদ্ধে সেখানকার জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের কথা। আমি লক্ষ্য করেছি, তিনি ঘরোয়া সভার চেয়ে রাজপথের মিছিল কিংবা প্রকাশ্য কর্মসূচির প্রতি বেশী আগ্রহী ছিলেন। সংগঠনের তহবিলের ঝকঝকে হিসেব রাখতেন। আর বলতেন, তহবিল ব্যাপারটাই বেশ বিশ্রী রকমের জটিল। তাই একে সব সময়ই স্বচ্ছ রাখতে হয়। না-হলে সমূহ বিপদ। জুনো ভাইয়ের এসব কথার মধ্যে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতালব্ধ বার্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। যা রাজনৈতিক কর্মীদের অনুধাবন করা অন্তত আজকের দিনে খুবই জরুরি। জুনো ভাই চিরবিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর লালিত আদর্শ বামপন্থাকে বিশাল রাজনৈতিক শক্তির জায়গায় দেখে যেতে পারেন নি। আমরা যদি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাম গণতান্ত্রিক বিকল্পকে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের মতো শক্তিতে পরিণত করতে পারি তাহলেই জুনো ভাইদের মতো মানুষদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে। কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনোর স্মৃতি- অমর হোক।
লেখক : সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, সিপিবি