লুণ্ঠন-বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধি সভা

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য রাখছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
একতা প্রতিবেদক : আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রুখে দাঁড়ানো, জনগণের সংগ্রামী ঐক্য জোরদার করা ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভা করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গত ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তোপখানা রোডস্থ বিএমএ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সারা দেশের ৬৪টি জেলা থেকে ৬৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী প্রতিনিধি সভায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৪৮ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা রাখেন। সভার শুরুতে সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, বাসদের কমরেড জাহেদুল হক মিলু, কমরেড রনজিৎ কুমারসহ সকলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়ক আবু হাসান রুবেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক কমরেড হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড লিয়াকত আলী। সভায় শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। প্রতিনিধি সভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নয়া উদারবাদ ও মুক্তবাজারের নীতিতে বর্তমান সরকার দেশ চালাচ্ছে। তার ফলে দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা, তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে। আর লুটপাটের মাধ্যমে বুর্জোয়া ব্যবস্থাকে আরো পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। রাজনীতিতে পচন ও বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ গড়ে তুলছে সরকার। এর বিরুদ্ধে বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে লাল ঝাণ্ডাকে উর্ধ্বে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। তিনি মন্দের ভালো তত্ত্ব নয়, মন্দের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভালকে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান। উন্নয়নের শ্লোগানের আড়ালে লুণ্ঠনের তীব্রতা বাড়াচ্ছে সরকার। এর বিরুদ্ধে বামপন্থিরাই একমাত্র বিকল্প। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, স্বাধীন হওয়ার পর গত ৪৮ বছরে বুর্জোয়ারা আদি পুঁজি সঞ্চয়ের পর্যায় অতিক্রম করে তাদের হাতে (৩৬টা পরিবার) অনেক পুঁজি জমেছে। এখন নিরুপদ্রব লুণ্ঠন বহাল রাখতে এক দলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। যে কারণে জনগণের ভোট ছাড়া ৩০ ডিসম্বের নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য। তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বুর্জোয়ারা গত ৪৮ বছরে ২টা প্রেসিডেন্ট হত্যা, ৫ বার সামরিক শাসন, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী খুন করেছে। বেসামরিক লেবাসে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। তিনি এই অবস্থার অবসানে মূল শত্রু ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাথে মতবিনিময় করে শ্রম, কৃষি, ছাত্র সমস্ত ক্ষেত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২২ পরিবার তাড়িয়ে ৩৬ পরিবার প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা ছিল না। কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন ১০৪০ টাকা ধানের দাম, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এ জন্য সকল শ্রেণি পেশার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান। কমরেড সাইফুল হক বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তাদের অধীনে আর কোন নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমান সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতায় আছে এবং এর বিরুদ্ধে জনগণের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। সরকারের জবরদস্তির বিরুদ্ধে পাল্টা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি সংসদের যাওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমান সংসদ ও বর্তমান সরকারের নৈতিক বৈধতা তৈরি হবে না। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশাররফ হোসেন নান্নু সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট গত ১ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লড়াই সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। জনগণের নানা ইস্যুতে রাজপথে আপসহীনভাবে লড়ই করছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতির নির্বাচনের সংসদ ভেঙে দিয়ে অতি দ্রুত নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও তিনি করেন। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন মোকাবেলায় জনগণের সংগ্রামী ঐক গড়ে তুলে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার জন্য জোটের সকল নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি: ২৩ জুলাই গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় টিমের সফর। ৩ আগস্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক। জুলাই-আগস্ট মাসে বিভাগীয় শহরে জনসভা। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জেলা শহরে জনসভা। নভেম্বর মাসে জাতীয় কনভেনশন।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..