যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের ৫ জনের ফাঁসি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : একাত্তরে গাইবান্ধা সদরে অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা ও দেশেত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে বাবা- ছেলেসহ পাঁচ রাজকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত ১৫ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণা করে। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রঞ্জু মিয়া, আবদুল জব্বার মণ্ডল, তার ছেলে মো. জাছিজার রহমান খোকা, মো. আবদুল ওয়াহেদ মণ্ডল ও মো. মনতাজ আলী বেপারি ওরফে মমতাজ। তাদের মধ্যে কেবল রঞ্জু মিয়া রায়ের সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন, বাকিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক। পাঁচ আসামির সবাই গাইবান্ধা সদর উপজেলার নান্দিনা ও চক গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা। একাত্তরে তারা সবাই ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। আদালত সূত্র জানায়, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চারটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগেই আসামিদের দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। মামলা সুত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধা সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা, দৌলতপুর, মিরপুর, সাহার বাজার, কাশদহ, বিসিক শিল্পনগরী, ভবানীপুর ও চকগয়েশপুর গ্রামের ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবীর হোসেনসহ সাত নিরস্ত্র মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশ হিন্দু লোককে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে। আদালত সূত্র জানায়, প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। পরদিন গাইবান্ধার পুলিশ রঞ্জু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। ২৯ মে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর এক আসামি আজগর হোসেন খান মারা যাওয়ায় ৫ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৮ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৪০টি মামলার ১০২ জন আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৯৪ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৭ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে। এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন ছয়জন। তাদের মধ্যে আজগর হোসেন খান মামলার তদন্ত চলাকালেই মারা যান। ২০১৮ সালের ১৭ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বাকি পাঁচ আসামির যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। জামায়াতের টিপু সুলতানের রায় যেকোনো দিন: একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার জামায়াত নেতা মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে মামলায় রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ১৭ অক্টোবর বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। গত বছরের ২৯ মে জামায়াতের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে দুই অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। শুনানি শেষে আজ মামলাটি বিচারিক কাজ সম্পন্ন করে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। ওই বছরের ২৭ মার্চ মামলায় তদন্ত শেষ করে ৪২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন (আইও) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন। এ মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠনের অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দু’জনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে পাওয়া যায়। তবে ৬ আসামির মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা রাজাকার, আবুল হোসেন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন কেবল আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু। তার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ রয়েছে। এখন তিনি কারাগারে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় টিপু সুলতান জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তীকালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান। এক নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাক সেনারা বোয়ালীয়া থানার সাহেব বাজারের এক নম্বর গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করেন। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। দুই নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় এ আসামি, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাক সেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। এসময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে। পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালকের বিচার শুরু: মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৪ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত। গত ১৬ অক্টোবর বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদালত সূত্র জানায়, এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৪ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করে দিয়েছেন আদালত। আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ৬০০ জনকে হত্যার ঘটনায় একটি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। যেটি গণহত্যার অভিযোগ হিসেবে বিচার হবে। এর আগে কয়েক দফা পিছিয়ে গত ১৬ অক্টোবর এ মামলাটি অভিযোগ হিসেবে গঠিত হলো। গত বছরের ৩০ অক্টোবর আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রসিকিউশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে প্রসিকিউশন পক্ষ তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়। এ মামলায় মোট ৫৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিকেল অনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন ওয়াহিদুল হক রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ ক্যাভেলরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্টের দায়িত্বে থেকে চারটি সামরিক জিপে মেশিনগান লাগিয়ে গুলি বর্ষণ করে রংপুর সেনানিবাস এলাকায় ৫০০ থেকে ৬০০ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হত্যা, গণহত্যা ও অসংখ্য মানুষকে গুরুতর আহত করেছে। গুলি বর্ষণ করে সংলগ্ন এলাকায় বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। হত্যা, গণহত্যার শিকার মানুষের লাশ পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে কয়েকটি গর্তে মাটি চাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২৪ এপ্রিল সকালে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামি ওয়াহিদুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
শেষের পাতা
রাষ্ট্রীয় খাতেই আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু করতে হবে
লুটেরাদের বিকল্প ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ সমাধান নয় বলছেন শিক্ষার্থীরা
সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে
‘বাড়তি টাকা নিয়ে এসেও কুলাতে পারছি না’
শিক্ষা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
উপজেলা নির্বাচনে জামানত বৃদ্ধি দেশকে লুটেরাদের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত
ক্ষেতমজুর নেতা ছাইদার আলী মণ্ডলের মৃত্যুতে শোক
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ ৮ দফা দাবি সিপিবির
খাল-বিলের পানি সেচে চলছে মাছ ধরার ধুম
সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না
৭ দিনের সংবাদ...

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..