অমানবিক, অসভ্য, নজিরবিহীন ও বেআইনি

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
প্রায় এক মাস ধরে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিএসএফ দেশটি থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানুষজনকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঠেলে দিচ্ছে। অত্যন্ত কুৎসিত ও অমানবিকভাবে শুধুমাত্র গায়ের জোরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এসব দরিদ্র ও নিরীহ সাধারণ মানুষদের। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কাও করছে না প্রতিবেশী দেশটি। ভারত অবৈধ বসবাসকারীদের বাংলাদেশি নাগরিক ভেবে ঠেলে দিচ্ছে বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে তাদেরকে স্পষ্ট করেই বলা হচ্ছে, যদি অবৈধভাবে কেউ সেখানে থাকে, তাহলে তাকে যেন আইনগতভাবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাঠানোর নজির রয়েছে। তাহলে ভারত কেন নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুদের বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে? অনেকেই এক বাক্যে বলছেন, বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই এই কৌশল ব্যবহার করছে। এটি নিন্দনীয়। যাদেরকে এভাবে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই এখানে এসে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হচ্ছেন। আইনি ঝামেলার মধ্যে তাদেরকে পড়তে হচ্ছে। তারা ঠেলে দেওয়ার যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন, সেগুলো শুধু অমানবিকই নয়, ভয়ঙ্করও বটে। কিছুদিন আগে তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে। রাতে আঁধারে খাগড়াছড়ির ফেনী নদী দিয়ে একটি পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে কোমড়ে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদীতে ভাসতে ভাসতে তারা এপাড়ে এসে উঠেছেন। ফেরত আসা একজন বলেছেন, তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তারপর তাদের ধরে এনে হাত-পা বেঁধে সীমান্তের কাছে আনা হয়। তাদের কাছ থাকা টাকা-পয়সা ও মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে মধ্যরাতে মারধর করে জোরপূর্বক নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। নদীতে ফেলার আগে তাদের কোমরে প্লাস্টিকের খালি বোতল বেঁধে দেওয়া হয়। এতে তারা পানিতে ভাসতে ভাসতে সীমান্তে চলে আসেন। অনেকে এটাও বলেছেন, তাদের ভারতের আধার কার্ড, প্যান কার্ড সবই আছে। তাদের সেই কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তারপরও তাদেরকে বাংলাদেশি বানিয়ে সীমান্ত দিয়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পুশ ইনের শিকার প্রতিটি মানুষ এইরকম ভয়াবহ বিবরণ দিচ্ছে। এদিকে বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মোট এক হাজার ৫৩ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১১১ জন, কুড়িগ্রাম দিয়ে ৮৪, সিলেট দিয়ে ১০৩, মৌলভীবাজার দিয়ে ৩৩১, হবিগঞ্জ দিয়ে ১৯, সুনামগঞ্জ দিয়ে ১৬, দিনাজপুর দিয়ে দুই, চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে ১৭, ঠাকুরগাঁও দিয়ে ১৯, পঞ্চগড় দিয়ে ৩২, লালমনিরহাট দিয়ে ৭৫, চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ১৯, ঝিনাইদহ দিয়ে ৪২, কুমিল্লা দিয়ে ১৩, ফেনী দিয়ে ৩৯, সাতক্ষীরা দিয়ে ২৩ ও মেহেরপুর দিয়ে ৩০ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। এ ছাড়া, সুন্দরবনের দূরবর্তী মণ্ডারবাড়িয়া এলাকা দিয়েও ৭৮ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। বিএসএফ ও ভারতীয় অন্যান্য সংস্থাগুলোর এ ধরনের পুশ ইন কার্যক্রম অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার কথা স্বীকার করছে না, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মিথ্যাচারের শামিল। এ ধরনের একতরফা পদক্ষেপ স্বীকৃত প্রত্যাবাসন ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির লঙ্ঘন। এই ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। যদি কোনো দেশে অবৈধভাবে কেউ বসবাস করে তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পাঠাতে হবে। ভারত সেটা করছে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে হলে অবশ্যই ভারতকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..