নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়ার চক্রান্ত বন্ধের আহ্বান

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email
একতা প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়ার জন্য অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গত ১০ মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ বিষয়ে সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও দেশের সচেতন দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে দেশের স্বার্থ রক্ষার দাবি জানালেও সরকার এখনও পর্যন্ত কর্ণপাত করছে না। বিবৃতিতে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি অপারেটরের হাতে তুলে দেয়ার চক্রান্ত বন্ধ এবং দেশীয় বেসরকারি মাফিয়াচক্রের হাত থেকে এনসিটিকে মুক্ত করে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার আহ্বান জানান হয়। বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের রাজস্ব আয়ের বড় অংশের যোগান দেয় এ সমুদ্রবন্দর। আর চট্টগ্রাম বন্দরের হৃৎপি- হিসেবে পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ২০০৭ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে এনসিটি নির্মাণ করে। এরপর আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন করে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, যখন গুরুত্বপূর্ণ এ টার্মিনালটি পরিচালনার প্রসঙ্গ আসে, তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ এর ভার তুলে দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। আমরা দেখেছি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী চক্র এনসিটিসহ বন্দরের যখন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ঘিরে মাফিয়াদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ বিষয়ে আমরা অতীতে বহুবার বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগমুহূর্তে এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও গঠন করে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তারা বিদেশিদের হাতে এনসিটি তুলে দিতে পারেনি। আমরা দেখেছি, বিগত স্বৈরাচার সরকারের মতো বর্তমান অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের সময়েও এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেয়ার জোর চক্রান্ত শুরু করেছে। দুবাই-আমিরাতসহ বিভিন্ন বিদেশি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্প্রতি বন্দর চেয়ারম্যান বিদেশিদের হাতে এনসিটি দেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এক সংবাদ সম্মেলনে। বিবৃতিতে বলা হয় অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন কার্যকলাপে চট্রগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ, চট্রগ্রামবাসীসহ দেশবাসী বিক্ষুব্ধ। আমাদের প্রশ্ন হলো: বন্দর যদি নিজের টাকায় টার্মিনাল বানাতে পারে, তাহলে সেটি নিজে পরিচালনা করতে পারবে না কেন? সেই টার্মিনাল কেন বিদেশি গোষ্ঠী কিংবা দেশি মাফিয়াচক্রের হাতে তুলে দিতে হবে? এর আগে চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি জেটিসহ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেটি সৌদিআরবের কাছে ইজারা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করার সময় সিপিবি ও বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। চট্রগ্রাম বন্দরকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে এমন ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের খেলা চলে আসছে। তখন আন্দোলনের পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানকে বন্দর নির্মাণের জন্য কর্ণফুলী নদীর মোহনা ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল। তখন বাংলাদের কমিউনিস্ট পার্টির তিনজন নেতা-বর্তমান সভাপতি কমরেড মো. শাহ আলম, পার্টির বন্দরের নেতা কমরেড নজরুল ইসলাম ও সুনীল আইচ হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের এসএস কোম্পানিকে দেয়া ইজারা বাতিল হয়। সিপিবির পক্ষ থেকে আমাদের সুষ্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, চট্রগ্রাম বন্দরকে নিয়ে বারবার এ ধরনের ছিনিমিনি খেলা চলতে পারে না। এনসিটি, পিসিটি, সিসিটিসহ বন্দরের কোনো স্থাপনা দেশি-বিদেশি কোনো ধরনের বেসরকারি খাতে দেয়া যাবে না। চট্রগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বন্দরের তত্ত¦বাবধানে বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরাই পরিচালনা করতে সক্ষম বলে আমার মনে করি। বিবৃতিতে অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরের যেসব স্থাপনা পরিচালনায় বেসরকারি গোষ্ঠী যুক্ত আছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও এনসিটিকে বিদেশিদের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, চট্রগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। বন্দরকে বেসরকারিকরণ কিংবা দেশি-বিদেশি মাফিয়া চক্রের ছিনিমিনি খেলার যে কোনো ষড়যন্ত্র দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..