বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির একাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে রাজধানীতে মিছিল একতা প্রতিবেদক :
দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের ঐতিহ্যবাহী লড়াকু সংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির একাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থান ’২৪-এর আকাঙ্ক্ষা ছিল শোষণ-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছরেও যেমন তাঁর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। তেমনি গণ-অভ্যুত্থান ’২৪-এর আকাঙ্ক্ষারও বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শোষণ-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে। ক্ষেতমজুরদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য শোষণ-বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জোরদার করতে হবে বলে নেতারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গত ১৬ মে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ক্ষেতমজুর সমিতির একাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার প্রবীণ ক্ষেতমজুর নেতা মৃন্ময় মণ্ডল। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মৃন্ময় মন্ডল এবং দলীয় পতাকা উত্তালন করেন ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান।
উদ্বোধনের পর প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শিক্ষকনেতা অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম সবুর, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহেল আহম্মেদ, আহ্বায়ক অর্ণব সরকার প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন
সভাপতি : ডা. ফজলুর রহমান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা।
উদ্বোধনী সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরও ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। মানুষ কাজ চেয়েও কাজ পায় না। আবার অনেক সময় ন্যায্য মজুরিও পায় না ক্ষেতখামারে কর্মরতরা। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। একজন ক্ষেতমজুর যা আয় করেন তা দিয়ে তার সংসারের খাবারই ঠিকমতো জোটে না। ফলে তাঁর সন্তান শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ টাকা ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা পাওয়া যায় না। তাই ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরের সন্তান আরেকজন গ্রামীণ মজুর হয়েই বেড়ে ওঠে। এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আগামী দিনে গরিব-মেহনতি মানুষের সরকার কায়েম করতে হবে বলে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশে যত খাসজমি ধনীদের দখলে আছে তা দখলমুক্ত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের বরাদ্দ দিতে হবে। রেশনিং চালু করে দুর্নীতিমুক্তভাবে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও গরিব-মেহনতি মানুষের প্রাণ বেশি ঝরেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার তাদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশ শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে রিপোর্টের ওপর প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। সবশেষে ডা. ফজলুর রহমানকে সভাপতি, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজাকে কার্যকরী সভাপতি, অর্ণব সরকারকে সাধারণ সম্পাদক ও কল্লোল বণিককে সহকারী সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জয়নাল আবেদীন খান, পরেশ কর, আশরাফুল আলম, রফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, সাহা সন্তোষ, হারুন আল বারী। এছাড়া ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটিও গঠন করা হয়। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন ডা. ফজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন রেজা, অর্ণব সরকার, কল্লোল বণিক, অ্যাডভোকেট
সাধারণ সম্পাদক : অর্ণব সরকার সোহেল আহম্মেদ, পরেশ কর, রমেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন ও মোতালেব হোসেন।
১৯৮১ সালের ১৮ মার্চ গ্রামীণ সর্বহারা মানুষের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংগঠনটি শত বাধা-বিপত্তি সাহসের সাথে মোকাবিলা করে, ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরদের অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ডা. ফজলুর রহমান, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন খান, পরেশ কর, আব্দুল মান্নান, আশরাফুল আলম, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, সাহা সন্তোষ, হারুন আল বারী। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অর্ণব সরকার, সহ সাধারণ সম্পাদক কল্লোল বণিক।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সোহেল আহম্মেদ, রমেন্দ্র চন্দ্র বর্মন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, মোতালেব হোসেন, মোজাহারুল হক, প্রদ্যুৎ ফৌজদার, নলিনী সরকার, হাফিজার রহমান, লিয়াকত আলী কাক্কু, অ্যাডভোকেট চিত্তরঞ্জন গোলদার, অশোক সরকার, ডা. তপন বসু, আবুল কালাম, আমির হোসেন, ডা. আবু তাহের ভূঞা, আব্দুল করিম, আবুল হোসেন, শ্রীকান্ত মাহাতো, আব্দুর রউফ, অ্যাডভোকেট এনামুল হক, লোকনাথ বর্মন, মাসুম ইবনে শফিক, মো. ইসরাফিল, শাহাদত হোসেন খোকা, খোরশেদ আলম মন্ডল, আব্দুল আউয়াল, সুখেন্দু সুত্রধর, সুফিয়া খাতুন, সুশান্ত দেবনাথ খোকন, এমদাদুল হক মিলন, আমিনুল ইসলাম পিপুল, শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল খালেক, নাসির উদ্দিন, রেজাউল করিম রাজু, ফারুক বিএসসি, আব্দুস শহীদ, আব্দুর রশীদ, হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল, সেলিমউদ্দিন খান, বাসুদেব দাস, চৌধুরী আনোয়ার হোসেন, আবুল কালাম চাষী, জসিমউদ্দিন আহমেদ, হিরক পাশা, রোকেয়া বেগম, ফিরোজ আলম মামুন, সুজন বিপ্লব, খ ম মিরাজ, কাজী মনিরুজ্জামান, হিমাংশু বর্মন, মজিজুল ইসলাম।