৪০তম জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধন শেষে ছাত্র ইউনিয়নের বর্ণাঢ্য র্যালি [ ছবি: রতন দাস ] একতা প্রতিবেদক :
লড়্ইা সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪০তম জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রতি নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়েছে।
১৯ নভেম্বর ‘আলোকে চিনে নেয় আমার অবাধ্য সাহস’ স্লোগানকে ধারণ করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রকাশ্য ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ডাক দেওয়া হয়।
এদিন সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের সঞ্চালনা এবং বিপুল সংখ্যক বর্তমান ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে এবারের ৪০তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিক ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লড়াইরত চা শ্রমিকরা।
উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মনীষী রায়, সহ-সভাপতি দীপক শীল, চা শ্রমিক নেতা মুকেশ কর্মকার অনুপ, পাটকল শ্রমিকনেতা এস এ রশীদ।
বক্তারা বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে ১৭ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছুটে চলছে নিয়ন্ত্রণ হারানো বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দুনিয়াব্যাপী চলছে মহামারির তা-ব। ভগ্ন স্বাস্থ্যখাতের বাংলাদেশ অদৃশ্যের উপর নির্ভর করেই পাড়ি দিচ্ছে মহামারির দুরন্ত সায়র। এই অগণতান্ত্রিক সরকারের জুলুম-নিপীড়ন, লাগাতার ধর্ষণ ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি, দারিদ্র্য, বেকার সমস্যা, নাজুক চিকিৎসা ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, দুর্নীতির দৌরাত্ম্য এখন প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পরিচিত দৃশ্য।
ছাত্রনেতারা বলেন, করোনা মহামারীতে ভগ্ন শিক্ষাব্যবস্থা যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মার্চের ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেওয়ার পর অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়কেন্দ্রীক শিক্ষা থেকে স্থায়ীভাবে দূরে চলে গেছে। নিয়মিত পাঠদান হয় না, অথচ সিংহভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগের টিউশন ফি আদায় করেই যাচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী ছাড়াই পাঠকার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, ‘দেশব্যাপী ধর্ষণের ধ্বংসলীলা, করোনা মহামারীর আঘাতে এরপর লণ্ডভণ্ড স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, অর্থনীতি, আওয়ামী লীগের একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন, লাগামহীন দুর্নীতি, আর তার সাথে এখানকার সহিষ্ণু সংস্কৃতির প্রাঙ্গণে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষবৃক্ষসহ সব অশুভ শক্তিকে মাথায় রেখেই এই তমসা কাটানোর অঙ্গীকারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে চায় সহস্র অবাধ্য সাহস’।
উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য র?্যালি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে বিকাল ৩টা থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে শুরু হয় দুদিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংগঠনের কার্যক্রমের নানাদিক বিশ্লেষণ এবং আশু ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা সাজাবেন। কাউন্সিল শেষে নতুন নেতৃত্ব পরবর্তী মেয়াদের জন্য সংগঠনের দায়িত্ব নেবেন।
যেসব দাবিতে এবার ছাত্র ইউনিয়নের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে; সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সার্বজনীন, গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক, একই ধারার, অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। বাজেটে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে। সামরিক খাতসহ অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ১০ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে উত্থাপিত ৯ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫০% টিউশন ফি মওকুফ করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এককালীন শিক্ষা বৃত্তি দিতে হবে। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিশেষ প্রণোদনা ও চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুনাফালোভী শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। কৃষিভিত্তিক কারিগরি এবং ভোকেশনাল শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ইউজিসি’র ২০ বছর মেয়াদি কৌশলপত্র বাতিল করতে হবে। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত কমাতে হবে। শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে ও তাদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।