নান্দাইলে বাড়ছে পান চাষ

Facebook Twitter Google Digg Reddit LinkedIn StumbleUpon Email

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা : কয়েক বছর আগেও নিজের পুরো জমিতেই ধান চাষ করতেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কৃষক মজিবুর রহমান। কিন্তু ধান চাষে কোনো বছর লাভ আবার কোনো বছর লোকসান গুনতে হতো। যে কারণে দুই-তিন বছর ধরে ধানের পাশাপাশি পান চাষ শুরু করেছেন তিনি। শুরুতে অল্প জমিতে চাষ করলেও বর্তমানে প্রায় দুই একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে তার। পান বিক্রি করে এখন নিয়মিত লাভ করতে পারছেন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়ী গ্রামের এ কৃষক। মজিবুর রহমানের মতো উপজেলার অনেক কৃষক এখন ধানের পাশাপাশি পান চাষে ঝুঁকছেন। অল্প জায়গা ও কম পুঁজিতে পান চাষ করা যায়। এছাড়া চারা রোপণের কয়েক মাস পর থেকে সারা বছর পান ওঠানো যায় বলে কৃষকরা নিয়মিত বিক্রি করতে পারেন। আর সারা বছর চাহিদা থাকায় অধিকাংশ সময় ভালো দামে পান বিক্রি করে লাভবান হন কৃষকরা। এসব কারণেই মূলত নান্দাইলের কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী উঠছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, একসময় উপজেলার প্রায় ৫০ হেক্টরের কম জমিতে পান চাষ হতো। তবে ২০১৪ সালে পান আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ হেক্টরে দাঁড়ায়। আর এ বছর উপজেলাটি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ হেক্টরে। পৌরসভাসহ উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর, মোয়াজ্জেমপুর, নান্দাইল, সিংরই, আচারগাঁও, শেরপুর, খারুয়া ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হচ্ছে জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় দুই হাজারের মতো পানচাষী রয়েছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পান চাষে সাধারণত সমতল জমি থেকে অপেক্ষাকৃত একটু উঁচু জমির প্রয়োজন হয়। এসব জমিতে বাঁশ, পাটখড়ি, বাঁশের শলা ও ছন দিয়ে বরজ তৈরি করে নিয়ম অনুযায়ী পানের চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ছয় মাস পর থেকে গাছ থেকে পান ওঠানো যায়। স্থানীয় হাট-বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার পান তুলে বিক্রি করেন চাষীরা। আবার অনেক সময় বরজ থেকেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। একবার বরজ স্থাপন করে নিয়মিত পরিচর্যা করলে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পান তোলা যায়। এসব বরজ থেকে প্রতি সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার পর্যন্ত পান বিক্রি করা যায়। স্থানীয় বাজারে, এক বিড়া (৮০টি) বড় সাইজের পান ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার চাষীরা। এছাড়া মাঝারি সাইজের এক বিড়া ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় এবং ছোট সাইজের পান ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। এসব পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও যায়। এদিকে পান চাষে লাভ হওয়ায় নান্দাইলের অনেক কৃষক আবাদি জমির পাশাপাশি বাড়ির আশপাশের পতিত উঁচু জমিতেও পানের বরজ স্থাপন করছেন। অনেকে ভালো লাভের আশায় ধানের আবাদ বাদ দিয়ে পান চাষ করছেন। জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নে রাজাবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ মিয়া জানান, একসময় ধানসহ সবজি চাষ করতাম। এখন পানের চাষ করি। পান চাষে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। সারা বছরই পান বিক্রি করতে পারি। পাইকাররা এসে পান কিনে নিয়ে যান। পানচাষী নাসিমা আক্তার জানান, অনেক কষ্টে দিন কাটত আমার। পরে অন্যদের দেখে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে পান চাষ করি। বর্তমানে ৬০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। নিজ পরিবার নিয়ে এখন সুখে-শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছি। নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুন অর রশিদ জানান, আমরা চাষীদের বিভিন্ন সময় পান চাষের ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে পান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়ে চলেছে। সরকারি সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আগামীতে এ উপজেলায় পান চাষ আরো বাড়বে।

Print প্রিন্ট উপোযোগী ভার্সন



Login to comment..
New user? Register..